বিয়ের আগে হবু কনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি বিয়ের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে। শীতকাল মানেই বিয়ের মৌসুম আর ধুমছে চলছে বিয়ের প্রস্তুতি । বিয়ের কয়েকটা দিন সতেজ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তার জন্য চাই ঠিকঠাক প্রস্তুতি। চারদিকে সামলাতে গিয়ে চেহারায় ধকলের ছাপ পড়ে না যায় । সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং প্রস্তুতির মধ্যে রূপচর্চার বিষয়টিও থাকতে হবে।
বিয়ের-আগে-হবু-কনের-প্রস্তুতি-সম্পর্কে-জেনে-নিন
বিয়ের আগে নিজের যত্নে কিছু প্রস্তুতি বাড়িতে বসে নিতে হবে। অনেক কিছু করতে হবে বিষয়টি কিন্তু এমনও না ।বাড়িতে থেকেই মূল যত্ন নেওয়া সম্ভব হয় । কারণ বিয়ের আসরের মূল মধ্যম হলো বিয়ের কনে।

ভূমিকা

নিজের জীবনকে যারা অনেক বেশি ভালোবাসেন তারা সবাই নিজেকে দেখে অনেক মুগ্ধ হন । আর সব ধরনের মুগ্ধতা ছাপিয়ে।প্রতিটি মেয়ে যায় জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিনগুলোতে তাদেরকে যেন রাজকুমারীর মত মনে হয় যাকে।এই পৃথিবী আগে কখনো দেখেনি আর একটা বিশেষ দিনের স্বপ্ন নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর অন্যরকম ভাবে উপস্থাপনার।

স্বপ্ন প্রায় সব মেয়ের মধ্যেই থাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে শেষ মুহূর্তের রূপচর্চা হওয়া উচিত অনেক পরিপাটি । বিয়ের অন্তত কয়েক মাস আগে থেকে ত্বক ,চুল ,শরীরের যত্ন নেওয়া শুরু করতে পারলে । সবচেয়ে বেশি ভালো হয় তবে সব সময় তা সম্ভব না হলেও কয়েক সপ্তাহ আগে বিউটি সেলুন বা পার্লারে গিয়ে করা উচিত ।এ ক্ষেত্রে ত্বক বা চুলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধান করা হয়তো সম্ভব হবে না।তবে চুল ও ত্বকের জৌলুস ফিরে আনার জন্য শেষের কয়েক দিনে যথেষ্ট ।

বিয়ের আগে হবু কনের প্রস্তুতি

বিয়ে একটি মেয়ের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ একটি মুহূর্ত। বিশেষ এই দিনটি নিয়ে সব মেয়েরা অনেক পরিকল্পনা থাকে।সেই সাথে আরও বেশি পরিকল্পনা থাকে।বিয়ের পোশাক কেমন হবে সাজগোষ্ঠী কেমন হবে নিজেকে কেমন দেখাবে। এসব নানা ধরনের চিন্তাযুক্ত থাকে । এসব চিন্তার সফল হবে যদি বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে সঠিকভাবে নিজের শরীর ত্বক চুলের যত্ন নেওয়া যায় এবং সচেতন থাকা যায়।

তাহলে এখন বিষয় হল কিভাবে হবু কণে নিজের প্রস্তুতি নিবে এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি আলোচনা করা হবে ।নিজেকে বধূ সাজে সাজানোর জন্য হবু কনের বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে । এর জন্য অন্তত ৩ মাস হলে সব থেকে বেশি ভালো হয় ।এতে করে নিজেকে প্রস্তুত করার অনেক সময় পাওয়া যায় এবং কোন তাড়াহুড়াও লাগে না মনে হয় না ।

বিয়ের তিন মাস আগের রূপচর্চা

ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়াঃ বিয়ের আগে থেকে চুল ও ত্বকের যত্ন দরকার । না হলে বিশেষ এই দিনে কনে কে দেখতে মোটেও ভালো লাগেনা আর সুন্দর চুল ও ত্বকের জন্য ভিটামিন ,আইরন ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে প্রতিদিন।যেমনঃ শাক-সবজি ,ফলমূল , ডিম , দুধ ,মাছ ,মাংসের ভূমিকা রয়েছে ব্যাপকভাবে।তাই খাদ্য তালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে যেগুলোতে বায়োটিন রয়েছে।

যেমনঃযেকোনো ধরনের ডাল ,সয়াবিন,বাদাম , ফুলকপি , ডিমের কুসুম , কলিজা , কলা , মাশরুম , কাজু বাদাম ইত্যাদি । একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ মাইক্রগ্রাম বায়োটিন প্রয়োজন ।যা প্রতিদিনের খাবার থেকে মিটানো সম্ভব হয় ।প্রতিদিনের খাদ্যে এ খাবারগুলো রাখলে বায়োটিনের ঘাটতি হয় না ।যদি সাপ্লিমেন্ট নিতে হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে ।

নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেয়াঃ ত্বকের যত্ন নিয়ে কোন ঘরে বসে করা যাবে না । ত্বকের যত্নে যদি অবহেলা করা যায় তাহলে বিয়ের পুরো আয়োজনটাই নিষ্প্রাণ মনে হবে । এজন্য রেগুলার মর্নিং এবং নাইট স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে । 

প্রতিদিন ডাবল ক্লিনজিং ,টনিং,ময়শ্চারাইজিং ছাড়াও সপ্তাহে ১ থেকে দুইবার স্কিন এক্সফোলিয়েট করতে হবে এছাড়া হেলদি ও পাম্পিং স্কিন পাওয়ার জন্য সপ্তাহে এক থেকে ২ বার সিট মাক্স ইউজ করতে হবে ।এছাড়া স্কিনের গ্লো ধরে রাখতে ৩ মাস আগে থেকেই ফেসিয়াল শুরু করতে হবে ।

ফিটনেস ও নিউট্রিশন রুটিনঃ বিয়ের আগে স্লিম হওয়াটা অনেকটা সৌন্দর্যের ব্যাপার মনে করা হয়।এজন্য বিয়েতে সুন্দর থাকার জন্য ফিটনেস এবং মিউটেশনের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে ।হুটহাট করে ডায়েট না করে একটি নিউট্রেশন চার্ট তৈরি করে সেটাই ফলো করতে হবে ।সম্ভব হলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে । বিয়ের আগে বাইরের জাঙ্ক ফুড এবং স্টিট ফুড খাওয়া কমিয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে ।

হেয়ার স্টাইল ও মেকআপ ট্রায়ালঃ বিয়েতে কিভাবে সাজগোজ করতে হবে । কিভাবে চুল বাঁধতে হবে। এসব টাইটেল দিতে হবে আগে থেকে যদি মেকআপ বা আউটফিট নিয়ে কোন কনফিউশন থাকে। তাহলে সেটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে এবং হাতের সময় থাকা মধ্যে সবকিছু প্রস্তুতিও নেওয়া যাবে ঠিকঠাক মতো ।

বিয়ের দুই মাস আগের যত্ন

মেকআপ আইটেম ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে ফেলাঃ বিয়ের আগে নানা রকম কাজের ব্যস্ততা থাকে । তাই তাড়াহুড়া করে কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মিস হয়ে যেতে পারে । তাই হাতে সময় নিয়ে মাস দুয়েক আগে থেকে মেকআপ আইটেম জিনিসগুলো কিনে ফেলতে হবে । 

শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে লিপস্টিক , ফাউন্ডেশন , গ্লাস , নেলপলিশ ,মেকআপ ব্রাশ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লিস্ট করে কিনে নিতে হবে। শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে জুতা , ব্লাউজ ,পেটিকোট আগে থেকে কিনে ফেলা ভালো । কারণ শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে ভালো কোন কিছু কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না ।

বিয়ের দুই সপ্তাহ আগের যত্ন

হেয়ার কাটঃ বিয়ের আগে যদি চুল কাটতে হয় ।তাহলে ২ সপ্তাহ আগে কেটে নিতে হবে। বিয়ের সময় কিভাবে চুল বাঁধবেন সেটা মাথায় রেখে চুল কাটতে হবে । নয়তো চুলের স্টাইল মানন মত হবে না।

হাত ও নখের যত্নঃ মেয়ের ২ সপ্তাহ আগে নেলপলিশ দেওয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে ।এতে বিয়ের সময় নখ দেখতে ভালো লাগবে । নখের কিউটিকল ভালো রাখতে নিয়মিত আমার বা অলিভ অয়েল বা ভেসলিন লাগিয়ে রাখতে হবে।নখের সাথে সাথে হাতেরও যত্ন নিতে হবে ।হাত যেন ময়েশ্চারাইজড থাকে সেজন্য হাতে হ্যান্ড লোশন লাগাতে হবে ।

বিয়ের এক সপ্তাহ আগের যত্ন

বিয়ের ৩ মাস আগে থেকে ফেসিয়াল করা উচিত । তবে শেষের দিকে বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে ফেসিয়াল করে নিতে হবে ।আর পাশাপাশি নিয়মিত ঘরোয়া যত্ন নিতে হবে ।যদি পার্লারে যাওয়ার মত পর্যাপ্ত সময় না থাকে তাহলে ফেসিয়াল কিট বাসায় এনে ফেসিয়ালের কাজটি সেরে নিতে হবে ।বিয়ের ৫ থেকে ৭ দিন আগে ফুল বডি ওয়াক্সিং করতে হবে ।ওয়্যাক্সিং এর পর পোস্ট ওয়্যাক্সিং , স্কিন কেয়ার স্টেপ হিসেবে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

বিয়ের আগে ঘরোয়াভাবে ফেসের যত্ন নিতে হবে । ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হবে বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক ।যেসব ফেসপ্যাক সল্প সময়ের মধ্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা দিবে সেসব ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে ।সুন্দর চুল পাওয়ার জন্য হট অয়েল মাসাজ করতে হবে ।এই ট্রিটমেন্টের সুবিধা হল চুল সিল্কি হয় ।চুলের গোড়া শক্ত হয় । হেয়ার গ্রোথ বাড়ে , নার্ভ রিলাক্স হয় ।

বিয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানিকতার যেন চুলের সৌন্দর্য বজায় থাকে তাই হট অয়েল মাসাজ করতে হবে নিয়মিত ।বিয়ের জন্য মনিকিউর এর ও পেডিকিউর দুটোই প্রয়োজন ।। ঘরে বসেই এগুলো করে নেয়া যায় । যদি পার্লার থেকে করাতে চান তবে সেটি পার্লারে গিয়ে করানো ভালো ।

বিয়ের ডায়েট

নিজের পছন্দমতো সবজি দিয়ে তৈরি জুস খাওয়া খাবেন। ডায়েট সঠিক রাখতে গেলে গাজর, বিট রুট এবং টমেটো সব থেকে ভালো অপশন। এবং তার সঙ্গে স্কিন গ্লোর জন্যও এটি বেশ উপকারী।
  • চিয়া সিডের পানি প্রতিদিন পান করার চেষ্টা করুন। চিয়া সিড ওমেগা থ্রির সব থেকে ভালো উৎস, এটি অল্প পরিমাণে ফ্যাট যেমন আয়ত্বে রাখে তেমনই স্কিনের সঙ্গে শক্তি বাড়াতে কাজ করে।
  • যদি খেতে ভালো লাগে তবে ১ বাটি পাকা পেঁপে প্রতিদিন খেতে পারেন। এটি দেহের কোষগুলোকে পুষ্টি প্রদান করে এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গেই খাবার হজমেও সহায়তা করে।
  • টক দই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। খাবারের সঙ্গে সঙ্গেই ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম দুটিই দারুণভাবে সরবরাহ করে। সে কারণেই টক দই প্রতিদিন খেতে হবে।
  • টাটকা সবজির রস খেলে ত্বক ভালো থাকবে। টমেটো, গাজর, লাউ, বিট, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, আমলকি ইত্যাদির রস (একসঙ্গে বা আলাদাভাবে) খেতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত ২ গ্লাস সবজির রস খান।
  • ৫ ইঞ্চি কাঁচা হলুদ বেটে তা ৫০-৬০ মিলি পানিতে ফুটিয়ে নিন। অথবা কাঁচা ও হলুদবাটা ৫০-৬০ মিলি পানিতে মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে একটি আস্ত লেবুর রস এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়া অভ্যাস করতে পারেন। এতে শরীরে থাকা টক্সিন দূর হবে এবং ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।
  • টাটকা কমলালেবুর রস ত্বক এবং চুলের জন্য খুব ভালো। ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খুব ভালো উৎস হচ্ছে কমলালেবু। যে বিয়ের কনেরা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তারা ডায়েটে ফ্যাট জাতীয় খাবার কম পরিমাণে রাখার চেষ্টা করুন।
  • ময়দা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার, যেমন রুটি, নান, নুডলস ইত্যাদি খেলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে পারে। ফলে এই ধরনের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। আর সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম খুব প্রয়োজন। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
  • ওজন কমানোর ডায়েট করার সময় চিনিযুক্ত খাবার, বেশি তেলে ভাজা–পোড়া খাবার, মিষ্টিজাতীয় পানীয়, ট্রান্স–ফ্যাটযুক্ত খাবার, প্রাণিজ ফ্যাট, রিফাইন করা বা চকচকে সাদা ময়দার তৈরি খাবার, মধু বা সিরাপজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় শুকনা ফল এবং প্রক্রিয়াজাত করা স্ন্যাক ফুড, স্টার্চযুক্ত সবজি (যেমন আলু, ভুট্টা, মিষ্টি আলু) কখনোই খাবেন না।
  • কাজের ফাঁকে ফাঁকে গ্রিন টি ও শুকনো ফল খাবেন। এ ছাড়া রাতে কার্বোহাইড্রেট–জাতীয় খাবার (ভাত-রুটি) বাদ দিয়ে সবজি ও প্রোটিন–জাতীয় খাবার (মাছ-মাংস-ডিম-দুধ) তালিকায় রাখুন। পর্যাপ্ত পানি বা তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন ।
  • মদ্যপানের নেশা থাকলে বিয়ের আগে তা অবশ্যই ত্যাগ করুন।কারণ, মদ্যপানের কারণে আপনার স্বাভাবিক রুটিনে ছেদ পড়ে।
  • ব্রেকফাস্ট কখনই বাদ দেবেন না। অনেকেই ওজন কমাতে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করেন না। যেটি ব্যাপক ক্ষতিকারক। তাই মেটাবলিজমের হারকে সঠিক রাখতে অবশ্যই ব্রেকফাস্ট করুন।
  • সবসময় হাতের কাছে ছোটখাটো স্ন্যাক্সস রাখুন। ক্ষুধা লাগলে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে খেয়ে ফেলুন।
  • তবে, শুধুমাত্র ডায়েট প্ল্যানই নয়। নিজের মনের মত লুক পেতে ফিজিক্যাল এক্সসাইজও করা জরুরি। তবে ভারী কোনো ব্যায়াম করতে গিয়ে শরীরে ব্যথা বাঁধিয়ে বসবেন না।
  • এই ছোট ছোট নির্দেশনাগুলো পালন করলেই শুধুমাত্র ওজন কমানো নয়, আপনার লুক পুরো চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। পেতে পারেন স্বাস্থ্যবান ত্বক এবং চুল যা আপনার ড্রিম ওয়েডিংয়ের স্বপ্নকে সফল করে তুলতে পারে। লাইফস্টাইলের এই সামান্য পরিবর্তনই বদলে দিতে পারে আপনার লুককে। তাই বিয়ের কনেরা মেনে চলুন এই ব্রাইডাল ডায়েট চার্ট।

বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে ৮ খাবারকে না বলুন

চিউইং গামঃ বিয়ের ছবিতে সেলফি আদর্শ সেলফি ফেস তৈরির জন্য অনেক ট্রেনারই চিউইং গাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু যত চিউইং গাম খাবেন তত শরীরে হাওয়া ঢুকে পেট ফাঁপবে। তাই বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে থেকে চিউইং গাম বন্ধ করুন।

ড্রাই ফ্রুটঃ শুকনো ফল অবশ্যই অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ডায়েট চার্টে অবশ্যই রাখা উচিত। কিন্তু এর মধ্যে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। বিয়ের ১ সপ্তাহ আগের টেনসনে ড্রাই ফ্রুট ওজন বাড়াতে পারে।

কপিঃ বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকোলি জাতীয় সবজির মধ্যে সেলুলোজের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। যা হজমের সমস্যা করতে পারে। বরং শশা জাতীয় সবজি এই সময় বেশি করে খান।

কফিঃ এই সময় নিয়ম করে সময় মেনে ঘুমের খুব প্রয়োজন। স্ট্রেস কাটাতে তাই কফির ওপর নির্ভর করবেন না। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়বে। বেশি কফি খেলে অ্যাসিডিটিও হতে পারে।

অ্যালকোহলঃ এর মধ্যে সালফিউরিক গ্যাস থাকে। তাই মদ্যপানের পর দিন আপনার শরীর ভার লাগবে। হজমের গন্ডগোলও হতে পারে। হ্যাঙ্গওভার থেকে মুড অফ হতে পারে, যা এই সময়ের জন্য মোটেও ভাল ব্যাপার না। টেনসন কাটানোর জন্য খেলেও এতে স্ট্রেস বাড়বে। পার্টিতে খেতে চান তাহলে হালকা কোনও অ্যালকোহলের ককটেল খান।

কার্বনেটেড ড্রিঙ্কঃ অনেকেই ভাবেন ডায়েট সফট ড্রিঙ্ক এই সময় খাওয়া যায়। কিন্তু বিয়ের আগে সকলেই ডায়েট চার্ট মেনে চলেন। সফট ড্রিঙ্কের মধ্য চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। পেটের মধ্যেও বুদবুদ কাটে সফট ড্রিঙ্ক। ওজনও বাড়বে, স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ মায়েরা মনে করেন বিয়ের আগে রোজ দুধ খাওয়া প্রয়োজন। এতে কমজোরি যেমন কাটবে, তেমনই রংও ফর্সা হবে। কিন্তু ডায়েটিশিয়ানরা জানাচ্ছেন, এই সময় অনেক রকম টেনসন থাকে। দুধ থেকে হজমে সমস্যা হতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারে ওজন বাড়ার প্রবণতাও দেখা যায়।

বিয়ের আগে যোনির যত্ন

বিয়ের আগে প্রত্যেক মেয়ের উচিত তার যোনির যত্ন নেওয়া কারণ মেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশেষ অঙ্গ হল এই যোনি । এটির প্রভাব ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি রয়েছে আর বৈবাহিক জীবনে এর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে । বিয়ের পরে বাসর রাতে যদি স্বামীকে মেয়েটির জন্য অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা থাকে বা কোন রকম দুর্গন্ধ ছড়ায় তাহলে স্ত্রীর প্রতি অনেকটাই আকর্ষণ কমতে থাকে । 

যোনি সংক্রমনের যে নারীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে । প্রতিদিন গোসলের সময় ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে চাইলে ভি-বস জাতীয় লোশন ব্যবহার করতে পারেন । পরে নরম তোয়ালে বা টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে খসখসে কাপড় ব্যবহার করা যাবে না ।সুতি অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে।

যোনি ভালো রাখতে আপেল, অ্যামন্ড, অ্যাভোকাডো, দই ইত্যাদি খেলে যোনিতে সংক্রমণ কম হয়। পাশাপাশি, সারাদিনে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। ভাজাভুজি, বাইরের মশলাদার খাবার, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।

বিয়ের আগের রাতে বর-কনে যা করবেন না

বিয়ের আগে হবু বর- কনের বেশ কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এর কারণ হলো বিয়ে দুজনের মধ্য নয় দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে ।এ সময় হবু বর কনে উভয়ের সামান্য ভুল ভ্রান্তির কারণে দুই পরিবারের ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে আবার বিয়ে ভেঙেও যেতে পারে । 

তাই বিয়ের আগে হবু বর কনের উচিত নিজেদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং পদক্ষেপ বুদ্ধিমত্তার সাথে সব প্রশ্নের মোকাবেলা করা ।এমনই কয়েকটি কাজ রয়েছে যে বিয়ের আগের দিন বাড়াতে হবু বর কনের করা উচিত নয় সামান্য ভাবলেও এসব ভুলের কারণ হতে পারে ।এমনকি বিয়ে ভেঙে পর্যন্ত যেতে পারে । 
কোন কাজ থেকে বিরত থাকবেন জেনে নিন কাজগুলো-
নেশাগ্রস্ত হওয়াঃ বিয়ের আগের রাতে অনেক পুরুষরাই বর্তমান সময়ে ব্যাচেলর পার্টি করে থাকে নারীরা এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই । বন্ধু বা বান্ধবী সাথে এ পার্টির আয়োজন করে এমন পার্টিতে মজার ছলে জেনে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক অনেকেই নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকে। 
এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে । দুর্ভাগ্যবশত হবু শ্বশুরবাড়ির কোনো সদস্য এ বিষয়ে জানলে বিয়েতে কু প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি আপনার ব্যক্তিত্বও নষ্ট হতে পারে। তাই এ ধরনের অঘটন ঘটানোর আগে বারবার ভাবুন ও সতর্ক থাকুন।

প্রাক্তনকে কল করাঃ প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীভাবে শেষ হয়েছে তা বিবেচ্য নয়, তবে বিয়ের আগের রাতে তাকে ফোন করার বোকামি করবেন না।এতে আপনিই বিপদে পড়বেন! এটি কেবল ভুল নয় বরং আপনার বিবাহিত জীবনকেও প্রভাবিত করতে পারে।বিয়ের আগের রাতে এমনিতেই মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন হবু বর-কনে। এর মধ্যে অতীত নিয়ে ভাবলে আপনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন।আর আবেগের বশে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তই ভালো হয় না। তাই ভুলেও প্রাক্তনকে বিয়ের আগের রাতে কল করবেন না।

বাজেট নিয়ে হবু সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলাঃ বিয়ের বাজেট বা আয়োজন সম্পর্কিত কোনো বিষয়ই হবু সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করবেন না। নিজ পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এ বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।কারণ কথোপকথনের সময়, হবু স্বামী বা স্ত্রীর আপনার কোনো কথায় খারাপ লাগতেই পারে! যার কারণে বিয়ের দিন তার মেজাজ খারাপ থাকতে পারে। তাই বিয়ের আগের দিন বুঝে শুনে তবেই কথা বলুন হবু সঙ্গীর সঙ্গে।

অভিযোগ এড়িয়ে চলুনঃ বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। আর এক জায়গায় অনেক মানুষ থাকলে তাদের মধ্যে মতভেদ বা বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলা হতেই পারে। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ছোট বিষয়ে অভিযোগ না করা বা কারও কথায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে অশান্তি না করা।

বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

বিয়ের সিদ্ধান্ত খুব সহজেই নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে কারণ এটি সারা জীবনের বিষয় যদি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তার মাশুল দিতে জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে । তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে ।বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হবু বর ও কনের নিজেদের মধ্যে কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন নিতে হবে । বিয়ের আগে একে অপরের কাছ থেকে নিচের প্রশ্ন প্রশ্ন গুলোর উত্তর জেনে নিতে হবে যেমন-

বিয়ের জন্য প্রস্তুত তো--
বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মানসিক আর্থিক প্রস্তুতি সব থেকে বেশি জরুরী তাই বিয়ের আগে এই বিষয়ে পরস্পরকে প্রশ্ন করতে হবে । যদি অপরজনের মনে কোন ধরনের দ্বিধা থাকে তবে সেটিও জেনে নিতে হবে দুজন মিলে সেই দ্বিধা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে । যদি মনের মধ্যে সংশয় থাকে তবে সেটি কাটিয়ে ওঠে বিয়ের বস্তুতে দিতে হবে ।সংশয় নিয়ে বিয়ে না করাটাই বেশি ভালো আগে ভালোভাবে ভেবে তারপরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি--
আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবটা হয় এমনটি না তবে পরিকল্পনাহীন জীবন হল পাতাছেেরা খামের মত । তাই পরিকল্পনা করে জীবন গোছানোর বুদ্ধিমানের কাজ ।বর ও কণের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে হবে উত্তর জেনে নিতে হবে। যদি পরিকল্পনা মোটামুটি মিলে তবে একই পথে এখনো সহজ হবে আর যদি দুজন দুই মেরুর হয় তবে বিয়ের মত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আর একবার ভেবে দেখতে হবে ।

ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন--
বর্তমান সময়ে ছেলে মেয়ে ও ভাই ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখে থাকে । তাই বিয়ের আগেই জেনে নিতে হবে হবু সঙ্গী ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনাটি কেমন ।এ নিয়ে তার পরিকল্পনাটি জেনে নিতে হবে এবং পরিকল্পনাটি জানাতে হবে ।বিয়ের পরে ক্যারিয়ার তৈরিতে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ভয় আছে কিনা তাও জেনে নিতে হবে এতে করে পরবর্তীতে কোন সমস্যা হবে না ।

কোথায় থাকবেন--
বিয়ের পরে দুজন মিলে একসঙ্গেবিয়ের পরে দুজন মিলে একসঙ্গে বিয়ের পরে দুজন মিলে একসঙ্গে সংসার করাটাই স্বাভাবিক প্রায় সব নারীরা চায় তাদের নিজের মনের মত একটা সংসার হোক ।যৌথ পরিবারে থাকতে চায় না বেশিরভাগ নারীরাই তাই বিয়ের পরে দুজনের সংসার ঠিক কোথায় হবে তা আগে থেকেই জেনে নিতে হবে । ভাসাভাসা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না মনে রাখবেন সংসার তৈরি কোন ছেলে খেলা না জটিলতা এড়াতে বিয়ের আগে সবকিছু জেনে নিতে হবে ।

কাজ ভাগাভাগি করা--
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী হয়ে থাকে ফলে কারো একার পক্ষে বাড়ির সব কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না ।আবার কোন পুরুষ যদি কেবল তার ইগো ধরে রাখার জন্য বাড়ির সব কাজকে নারীর কাজ মনে করে ফেলেন তাতেও আরো ঝামেলা বেশি তৈরি হবে । তাই বিয়ের আগে কাজ ভাগাভাগি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে ।আপনি কতটুকু করবেন এবং আপনার সঙ্গে কতটুকু করবেন সে বিষয়ে সম্পূর্ণ জেনে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।

সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত--
বিয়ের পরপরই সন্তান নিতে হবে এ ধারণা এখন অনেক পুরাতন হয়ে গেছে ।সন্তান ধারণ নিয়ে হবু স্ত্রীর মতামত কি সেটিও জেনে নিতে হবে।

যোগাযোগ--
সুস্থ যোগাযোগ মানেই সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক। জীবনে যেখানেই দাঁড়ান না কেন, দম্পতিকে অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে, স্বাধীনভাবে এবং সৎ থেকে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মতবিরোধ এবং ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে উঠতে এবং দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে যোগাযোগ একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। 

উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি রাগান্বিত হন বা কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে তাদের উচিত সঙ্গীর কাছে তা প্রকাশ করা যেন সঙ্গী বুঝতে পারে। সেটি তার যেকোনো সমস্যাই হোক না কেন।
আর্থিক সামঞ্জস্য।অনেক সম্পর্কের মতো দাম্পত্য জীবনে আর্থিক সক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দম্পতির বিয়ের আগে তাদের আর্থিক সামঞ্জস্য বিশ্লেষণ করা উচিত। এতে ঋণ, সঞ্চয় এবং ব্যয়ের ধরণ জড়িত।

জীবনধারা--
জীবনধারা একে অপরের সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। শখ, অবসর সময় এবং সামাজিকীকরণের মতো জিনিসগুলো দাম্পত্য জীবনে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বাইরে সময় কাটাতে পছন্দ করেন এবং অপরজন বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন তবে এটি পারস্পারিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।

লক্ষ্যে অন্তর্মিল--
দম্পতিদের মাঝে তাদের ভবিষ্যতের জন্য অভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা থাকতে হবে। চাকরি, পরিবার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের মতো উদ্দেশ্যগুলি এর অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ হিসেবে, যদি একজন সন্তান নিতে আগ্রহী কিন্তু অপরজন তাতে উৎসাহী না হলে সেটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

মানসিক সামঞ্জস্য--
প্রতিটি বিয়েতেই মানসিক সামঞ্জস্য অত্যাবশ্যক। জীবনে উত্থান পতনের প্রতিটি মুহূর্তেই একে অপরের পাশে থাকা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন একটি কঠিন সময় পার করতে থাকেন, তবে অপরজনকে মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে থাকা উচিত।

ধর্মীয় বিশ্বাস--
ধর্ম একজন ব্যক্তির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। বিয়ের আগে ধর্মীয় সামঞ্জস্যতা বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং রীতিনীতির মতো বিষয় নিয়ে কথা বলা জড়িত। যেমন, যদি একজন যদি খুব ধার্মিক হন এবং অপরজন যদি সেটিকে হালকা ভাবে নিয়ে থাকেন, তবে তা সর্বদা বিবাদের কারণ হতে পারে।

ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি--
বিবাহ ব্যক্তিগত বিকাশ এবং অগ্রগতির একটি প্রক্রিয়া। সংসারে একে অপরের ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং বিকাশের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর মধ্যে জড়িত থাকে তাদের স্বপ্ন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনের জন্য একে অপরকে সমর্থন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে চায়, তবে অন্য সদস্যকেও সেটিতে সম্মত হতে হবে।

বিয়ের আগের মানসিক প্রস্তুতি

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলোর মতো অন্যতম একটি সিদ্ধান্ত হলো বিয়ের পর সংসারের চাপ দায়িত্বশীলতা ,সঙ্গীর যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি সন্তান পালনসহ একাধিক বিষয় খেয়াল রাখতে হয় ।সব মিলিয়ে বিয়ের পরের জীবন রোমাঞ্চকর ঠিক তেমনি অনেক চাপেরও বটে । তাই বিয়ের আগে মানসিক ভাবে নারী পুরুষের উভয় প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ।

বন্ধুত্ব ভাব গড়ে তুলুন ও হাসতে শিখুনঃ বিবাহিত জীবনে সুখী হতে হলে জীবনসঙ্গীকে সেরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে । শুধু প্রেমিক বা গৃহকর্তা হিসেবে নয় বরং তার সাথে সব বিষয় শেয়ার করতে পারেন ।এজন্য তাকে বন্ধু ভাবতে হবে এবং সংসারে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে হবে । সব বিষয় নিয়ে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে । তাহলে দেখবেন সংসারে শান্তি থাকবে। সবার সংসারেই সমস্যা থাকে, যদি সব সময় আপনি সমস্যাগুলো নিয়েই ভাবেন তাহলে সুখী হতে পারবেন না। সব সমস্যার মধ্যেই হাসিমুখে থাকার মানসিক প্রস্তুতি নিন বিয়ের আগ থেকেই।

খোলা মনের ও নমনীয় হতে হবেঃ বিবাহিত জীবনের পথ কখনো বন্ধুর হয় না। এক্ষেত্রে পারিবারিক, আর্থিকসহ নানা বিষয়ে ঝড়ঝাপটা আসতে পারে। তাই কোনো বিষয় নিয়ে বা কারও কথা শুনে আক্রমণাত্মক হবেন না। বরং খোলা মনের হন ও নমনীয় ভাব বজায় রাখুন শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে।

‘আমরা’ বলতে শিখুনঃ বিয়েতে স্বার্থপরতার কোনো স্থান নেই, তাই বিয়ের পর আপনি কোনো বিষয়ে শুধু ‘আমি’ বলতে পারবেন না। ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ বলা শিখতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে, আপনি নিজের পরিচয় হারাবেন। জীবনসঙ্গীকে আপনি যেমন সম্মান ও মর্যাদা দেবেন, তার কাছ থেকেও তেমনটিই পাবেন। বিয়ের পর সংসারে শান্তি বজায় রাখতে অহংকার ও আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে দূরে থাকুন।

আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতাঃ বিয়ের আগেই হবু দম্পতির উচিত দুজনের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলে নেওয়া। কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে আর্থিক বিষয়কে কেন্দ্র করে। তাই বিয়ের আগেই হবু জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আপনার বেতন, ঋণ, সম্পদ, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলুন। আর সে হিসেবেই বিয়ে ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন। তাহলে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তু হতে পারবেন সহজেই।

ক্ষমা করা শিখুনঃ ক্ষমা একটি সফল বিবাহের অন্যতম চাবিকাঠি। সঙ্গীর ছোটখাট ভুল ক্ষমা করেই একে অপরের সঙ্গে বসবাস করতে হবে। তাই এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকুন। না হলে পরবর্তী সময়ে একে অন্যের প্রতি ভুল বোঝাবুঝি, তিক্ততা ও দূরত্বের সৃষ্টি হবে।

অন্যান্য বিষয়ঃ বিয়ের আগে মনের যত্ন নিতে হবে আশা করি থাকার চেষ্টা করতে হবে জীবনের সব দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে রূপচর্চার সময় কাটাতে হবে এতে করে চাপ যেমন কমবে সেই সঙ্গে ত্বক ও চুল সুন্দর হবে ।বিয়ে বাড়ির ঝামেলা কম নয় বিশেষ করে কোনের ওপর অনেক বেশি মানসিক চাপ পড়ে যখনই চাপ অনুভব করবেন কিছুক্ষণের জন্য কাজ বাদ দিয়ে ফ্রি থাকতে হবে কফি বা জানিয়ে বারান্দায় বসে 

প্রিয় বন্ধুগণও সঙ্গীকে ফোন দিয়ে কথা বলুন বা পছন্দের গান শুনতে পারেন ।নতুন পরিবেশে যাওয়ার আগে নিজ পরিবারের শঙ্কারে জমিয়ে সময় কাটাতে হবে সময় বের করে বাহিরে কোথাও খেতে যাওয়া একসঙ্গে বসে বিয়ের পরিকল্পনা দায়িত্ব গুলো ভাগ করে নিতে পারেন নিজ পরিবারের সঙ্গে ।বন্ধু মানুষের জীবনে অক্সিজেনের মতো কাজ করে তাই মানুষের অস্থিরতা থেকে দূরে থাকতে খোলা পরিবেশে বন্ধুদের সাথে মন খুলে গল্প করলে 

যেমন মনে শান্তি পাওয়া যায় তাদের সঙ্গে গায়ে হলুদ মেহেদি সন্ধ্যা বিয়ে নিয়ে পরিকল্পনা করতে বিয়ের আগেই হবু দম্পতির উচিত দুজনের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলে নেওয়া। কারণ বিবাহবিচ্ছেদের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে আর্থিক বিষয়কে কেন্দ্র করে। 

তাই বিয়ের আগেই হবু জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আপনার বেতন, ঋণ, সম্পদ, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলুন।প্রতিটি পরিবারের আলাদা নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার। এসব ক্ষেত্রে দুজনকেই সহযোগিতা পরায়ণ হতে হবে।লাভ বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ উভয় ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়েকে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দুজনকেই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।

বিয়ের আগের দিনের যত্ন

বিয়ের অনুষ্ঠানে কথা শুরু হওয়ার আগের দিন সবচেয়ে বেশি অস্থির এবং দুশ্চিন্তাময় মনে হয়। তাই নিজেকে যতদূর সম্ভব আকর্ষণীয় লাগে সেজন্য টেনশন বিহীন থাকতে হবে এবং রিলাক্স মোডে থাকতে হবে ।
  1. শরীল হাইড্রেট রাখার জন্য নিয়মিত পানি পান করতে হবে। বিয়ের আগের দিন নানা চিন্তায় পানি পানির কথা মোটেও ভুলে গেলে চলবে না ।
  2. কিলিনজার দিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার মুখ ধুতে হবে এরপর মুখ শুকিয়ে এলে টোনার দিয়ে মুখ মুছে ত্বকের উপযুক্ত ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে ।
  3. ত্বকের মরা কোষ ঝরানোর জন্য ওটমিল এবং এলোভেরা জেল ,লেবুর রস , চিনি মিশিয়ে মাক্স তৈরি করে । ত্বকে ৩ মিনিট রেখে ভেজা কাপড় দিয়ে মাসাজ করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ।এভাবে ১ সপ্তাহ করলে মরা চামড়ার ঝরে যাবে ।
  4. প্রতিদিন ১ টি করে ডিম মাথার ত্বক এবং চুলে মাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে অথবা এলোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে মাথায় লাগিয়ে নিতে হবে ।
  5. নারকেলের দুধ ,লেবুর রস , নিম পাতা বাটা মেশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে । ১ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে শেষে দুধ ও মধুর মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে ।
  6. চুলের রক্ষতা দূর করতে সপ্তাহে ৩ দিন চুলে তেল লাগিয়ে একটি প্যাক দিতে হবে ।প্যাকটি হলো ১ চামচ নারকেল তেল ,১ চামচ ক্যাস্টর অয়েল ,১ চামচ ভিনেগার ,১ চামচ শ্যাম্পু ,১ টা পাকা কলা ,১ চামচ মধু মিশিয়ে চুলে ৪০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ।
  7. হাত পায়ের নখগুলো পছন্দমত কেটে নখের ক্রিম লাগিয়ে দিতে হবে। একটি পাত্রে গরম পানিতে শ্যাম্পু , লবণ , লেবুর রস মিশিয়ে হাত পা ১০ মিনিট ডুবিয়ে তারপর হাত-পা পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে ।
  8. নিজেকে সতেজ রাখতে কোন স্পা বা বডি মাসাজ থেকে অ্যারোমা থেরাপি নিতে হবে ।
  9. মনের চাপ কমাতে বিয়ের আগে থেকে নানা রকমের এক্সারসাইজ করতে হবে ।

ডার্ক সার্কেল থেকে সাবধানঃ বিয়ের আগে মেয়েদের উপর বেশ স্টেজ যায় ।অনেক সময় দেখা যায় হবু কনে সারারাত জেগে হবু বরের সাথে কথা বলে এ কারণে চোখের নিচে কালি পড়ে যায় আর ডার্ক সার্কেল থাকলে চোখের মেকআপ ভালো ভাবে মানায় না । তাই ডার্ক সার্কেল থাকলে আই ক্রিম লাগাতে হবে ।
মেডিটেশন ও রিল্যাক্সিংঃ এই সময়ে এসে নার্ভাস হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক, তাই নিয়মিত মেডিটেশন করবেন। চাইলে ইয়োগা করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টাকে একটা রুটিন-এ বেঁধে ফেলুন।

বিউটি রেজিমঃ দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো বিউটি রেজিম মেনে চলতে হবে ।রোজ রাতে ঘুমাবার আগে হাত পায়ে ভালো করে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিতে হবে ।

ক্লিনজিংঃ ১ কাপ পুদিনাপাতা ও ১ কাপ তুলসীপাতা , ২ কাপ পানিতে ফুটাতে হবে। কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে পানিটা আইস বক্সে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। প্রতিদিন ১টি আইস কিউব বের করে ছোলা বা মটর ডালের বেসনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন। শুষ্ক ত্বকে সামান্য দুধ যোগ করতে পারেন।

টোনারঃটোনার ব্যবহার করতে হবে। ২ কাপ গোলাপের পাপড়ি অথবা পুদিনাপাতা, ২ কাপ পানি এবং আধা চা–চামচ কর্পূর নিয়ে চুলায় জ্বাল দিয়ে নিন।কিছুক্ষণ জ্বাল হলে ঠান্ডা করে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। ১৫ দিন পর্যন্ত এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, চোখ বন্ধ করে বেছে নিতে পারেন অসাধারণ এই টোনার।

ময়েশ্চারাইজারঃ সর্বশেষ ধাপ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন—১ কাপ গোলাপজল, আধা কাপ গ্লিসারিন এবং ১/৩ কাপ জলপাই তেল। প্রতিদিন ত্বকের যত্নে এই তিন ধাপ অনুসরণ করুন।

হাত, পা, পিঠ, গলার মতো অঙ্গগুলোর প্রতিও সমান যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। পাফি আই, আন্ডার আই ব্যাগ, ডার্ক সার্কেল—এই ধরনের সমস্যাও আজকাল কম-বেশি প্রায় সবারই থাকে। এর জন্যও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হারবাল ফেশিয়াল। রাতারাতি সমস্যা সম্পূর্ণ কমানো না গেলেও, কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস,যথাযথ পূর্বপরিকল্পনা

এবং নিয়মিত যত্ন আপনাকে করে তুলবে পিকচার পারফেক্ট ব্রাইড। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এই সি টি এম রুটিন মেনে চলতে হবে এর জন্য প্রথমে ক্লিনজারের সাহায্যে মুখ ধুয়ে নিতে হবে তারপর টোনার লাগিয়ে নিতে হবে শেষে মশ্চারাইজার লাগাতে হবে ।

লেখকের মন্তব্য

আজকেরে আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা বিয়ের আগে হবু বোনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আশা করি ।আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বিয়ের আগে কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সেটি জানতে পেরেছেন । এ রকম আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন । আজকের আর্টিকেল টি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার পরিবার ও বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন , ধন্যবাদ ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url